খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ :  ব্যাংকিং খাতের এক নক্ষত্রের পতন 

‘অর্থশক্তি এখন পদশক্তির চেয়ে বেশি শক্তিশালী। অর্থই এখন রাজনীতির নিয়ামক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তবে যাঁরা ভালো রাজনীতিবিদ, তাঁরা এমনটা করবেন না। দেশে এখনো ভালো রাজনীতি প্রতিষ্ঠা হয়নি। কোনো দলের মধ্যে এমনটা নেই। এখন অর্থশক্তিকে ব্যবহার করে অনেকে টিকে থাকা বা স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করছেন। আর অর্থ নিয়েই ব্যবসা ব্যাংকের। এ জন্য ব্যাংকের ওপর দমন–নিপীড়ন চলছে।’ কথাগুলো বলেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ। 

খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ :  ব্যাংকিং খাতের এক নক্ষত্রের পতন 

‘অর্থশক্তি এখন পদশক্তির চেয়ে বেশি শক্তিশালী। অর্থই এখন রাজনীতির নিয়ামক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তবে যাঁরা ভালো রাজনীতিবিদ, তারা এমনটা করবেন না। দেশে এখনো ভালো রাজনীতি প্রতিষ্ঠা হয়নি। কোনো দলের মধ্যে এমনটা নেই। এখন অর্থশক্তিকে ব্যবহার করে অনেকে টিকে থাকা বা স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করছেন। আর অর্থ নিয়েই ব্যবসা ব্যাংকের। এ জন্য ব্যাংকের ওপর দমন–নিপীড়ন চলছে।’ কথাগুলো বলেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ।

বাংলাদেশের অন্যতম বরেণ্য অর্থনীতিবিদ খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বছর বয়সে তিনি মারা গেছেন। বুধবার ৫টা ৪০ মিনিটে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইব্রাহীম খালেদের  প্রয়াণে কেউ আত্মার মানুষকে হারিয়েছেন, কেউবা হারিয়েছেন তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী এবং আদর্শ ও অনুপ্রেরণার উৎসকে। হতবাক ব্যাংকপড়ার মানুষ ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনেকেই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও স্মৃতিচারণা করেছেন।

৮০ বছর বয়সী ইব্রাহিম খালেদ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চলতি মাসের শুরুতে শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হলেও নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। গত ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে বিএসএমএমইউতে স্থানান্তর করা হয়। তার ছেলে খোন্দকার সাঈদ বলেন, ‘বাবার কোভিড নেগেটিভ হয়েছিল। কিন্তু বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।’

তার মৃত্যুতে শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সুষ্ঠু বিকাশে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যে মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তা এদেশের মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোক বার্তায় তিনি বলেছেন, দেশের ব্যাংকিং খাতের বিকাশে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এক শোকবার্তায় বলেছেন, প্রখ্যাত ব্যাংকার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন যোদ্ধা খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের বহুমুখী কর্মজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর তদন্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন নিয়েও গণমাধ্যমে সরব ছিলেন প্রয়াত এ ব্যাংকার।

জীবনী:
১৯৪১ সালে ৪ জুলাই গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করা খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ পড়ালেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভূগোলে স্নাতকোত্তর করার পর তিনি আইবিএ থেকে এমবিএ করেন। ১৯৬৩ সালে যোগ দেন ব্যাংকিং পেশায়। তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ১৯৯৬ সালে অগ্রণী ব্যাংক এবং ১৯৯৭ সালে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। ২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। এছাড়া তিনি ৯ ডিসেম্বর ২০২০ সাল থেকে পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারের পতনের কারণ অনুসন্ধানে সরকার যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।

২০০০ সাল থেকে তিনি কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার পরিচালক, নির্বাহী পরিষদের সভাপতি ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।২০১১ সালে বাংলা একাডেমি ইব্রাহিম খালেদকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয়। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে গেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সাবেক ডেপুটি গভর্নর।

এছাড়া ব্যাংকিং ও অর্থনীতি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে ২০০৯ সালে ‘খান বাহাদুর আহছানউল্লা স্বর্ণপদক’ ও ২০১৩ সালে ‘খান বাহাদুর নওয়াব আলী চৌধুরী’ জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়।